অবিস্মরণীয় সমর কৌশলী সান জু

‘চীনের প্রাচীর’ পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ দেয়াল। এর দৈর্ঘ্য ৮,৮৫০ কি মি। চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াং তৈরী করা শুরু করেন খ্রীষ্টপুর্ব ২২০ সালে। এর তৈরী করার কাজ খ্রীষ্টপুর্ব  ২০৬ চালু ছিল। এরও প্রায় তিনশত বছর আগে Sun Tzu (সান জু বা মাস্টার সান বা সান উ, খ্রীষ্টপুর্ব ৫৪৪ থেকে  খ্রীষ্টপুর্ব ৪৯৬) আনুমানিক খ্রীষ্টপুর্ব ৫০০ সালে  The Art of War গ্রন্থ সরাসরি যুদ্ধ কৌশল বিষয়ে রচনা করেন। যুদ্ধ-বিদ্যায় এ গ্রন্থের প্রভাব এখনো অটুঠ। যুদ্ধ-বিদ্যা সরাসরি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিযোগীতা-বিদ্যায় অত্যন্ত দরকারী। কিন্তু একবিংশ শতাব্দির এ পৃথিবীতে দিনে দিনে ডিসরাপ্টিভ প্রতিযোগীতা হচ্ছে। সবাইকে নিত্যনতুন বিকল্প বা পছন্দের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে বেশিরভাগ মানুষের সিদ্বান্ত গ্রহনে অতিমাত্রায় কঠিন সময় ব্যয় হচ্ছে। প্রচুর সময় ও শ্রমসাধ্য সিদ্বান্ত গ্রহনের পরও মানুষ পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারছে না।

Picture
তথ্য-যোগাযোগ প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় আজকের পৃথিবী অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় যোগাযোগে ক্ষুদ্রতর এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এক সময় আমরা যা কল্পনা বা স্বপ্ন মনে করতাম, আজ তা বাস্তব। এখন আমাদের হাতের মুঠোফোন আরব্য-রজনী কাহিনীরআলাউদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপের দৈত্যের চেয়ে কম নয়। প্রযুক্তির গণতন্ত্রায়ণ ও  সহজলভ্যতা এবং বহুবিদ ব্যবহার আমাদের জীবনকে অভুতপূর্ব ভাবে প্রভাবিত করেছে।​

​সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলো সহ ওয়েব-সাইট, সার্চ ইঞ্জিন, ই-মেইল এবং অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর কল্যাণে আজকের পৃথিবী দ্রুততম এবং ক্ষুদ্রতর হয়েছে। এখন সবাই খুব সহজেই সামাজিক-যোগাযোগ-মাধ্যম গুলোর সহযোগিতায় নিজেদের পছন্দের জগৎ তৈরী করছে। সহজেই নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন তথ্যের আদান-প্রদান করছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (artificial intelligence), উন্নত রোবোটিক্স, নেটওয়ার্কস,  উন্নত উৎপাদন ব্যবস্থা, সহযোগী সংযুক্ত প্লাটফর্ম (collaborative connected platforms) ইত্যাদি আমাদের চেনা বিশ্বকে করছে নতুন প্রশ্নের মুখোমুখী। সহজেই বুঝা যাচ্ছে, আমাদের পরিবেশের উপাদান সমূহে একটা বিরাট পরিবর্তন এসেছে। এ পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি কর্মকান্ডে, চিন্তায় ও আচরণে। এ কালকে ‘ডিসরাপ্টিভ প্রযুক্তির’ সময় বলা হচ্ছে।

‘যুদ্ধ কৌশল’ হল জীবন এবং মৃত্যু, নিরাপত্তা অথবা ধ্বংসের। তাই এটাকে অবহেলা করা যায় না।
(সান জু, দি আর্ট অব ওয়ার, অধ্যায় ১: পরিকল্পনা)

ব্যক্তিক পরিবেশের উপাদানের পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশেও পরিবর্তন এসেছে। এই যুগে অজানা-অকল্পনীয় প্রতিষ্ঠানও আবির্ভূত হচ্ছে প্রতিযোগী হিসেবে। প্রতিযোগীতার বৈরীতা পরিপূরক পণ্য সেক্টরের বাইরেও বিস্তৃত হয়েছে। দুইটি বিশ্বযুদ্ধের অসম্ভব বৈরী পরিবেশে সফলভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় দক্ষতা প্রমাণ করা প্রতিষ্ঠানও একবিংশ-শতাব্দির এ ডিসরাপ্টিভ প্রতিযোগীতায় হিমশিম খাচ্ছে।

​মানুষ আজন্ম প্রতিযোগীতার সম্মুখীন। ঘরে-বাইরে, অফিস-আদালত, ব্যক্তিগত কিংবা পেশাগত জীবন অথবা সামাজিক-রাজনৈতিক, ঘোষিত-অঘোষিত, সর্বোপরি  অর্থনৈতিক ও অর্থনীতি বহির্ভুত জীবনে মানুষ সবসময় প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি।

“যদি নিজের শত্রুকে জানেন এবং নিজেকে জানেন, শত যুদ্ধকে ভয়ের কোন কারণ নাই। যদি নিজেকে জানেন কিন্তু শত্রুকে নয়, তাহলে প্রত্যেকটি যুদ্ধে আপনি পরাজিত হতে পারেন। শত্রুকে এবং নিজেকে না জানলে প্রতিটি যুদ্ধে পরাজিত হবেন।”।
(সান জু, দি আর্ট অব ওয়ার, অধ্যায় ৩: কৌশলী আক্রমণ)

সান জু প্রায় ২৫০০ বছর আগে তৎকালিন যুদ্ধ-বিগ্রহ, প্রতিদ্বন্দ্বিকে পরাজিত করার কৌশল, নেতৃত্বের গুনাবলী, আত্নরক্ষার উপায়, শত্রুপক্ষের তথ্য সংগ্রহ করে দূর্দশিতার সাথে তার ব্যবহার ইত্যাদি যুদ্ধ-জয়ের-কৌশল নিয়ে লিখেছিলেন। কিন্তু এ গ্রন্থের প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ অবস্থান বিশ্লেষণ করার অনবদ্য ক্ষমতার কারনে রাজনীতি, সংস্কৃতি, খেলাধূলা এবং ব্যবসা-বানিজ্যের কৌশলগত চিন্তা-ভাবনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠে। এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকার রাজনীতি, ব্যবসা-বানিজ্য এবং খেলাধূলায় দি আর্ট অব ওয়ারএ বণির্ত প্রতিযোগী কৌশলের বহুল ব্যবহার লক্ষ্যণীয়। এ গ্রন্থ পাঠে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় দৈনন্দিন সিদ্ধান্ত এবং প্রসারের বিভিন্ন গুরুত্ত্বপূর্ণ সিদ্দ্বান্ত গ্রহনের বিষয়সমুহ, যেমন প্রতিষ্ঠানের আভ্যন্তরিন ও বহিঃ পরিবেশ বিশ্লেষন (SWOT Analysis, 5 Force Analysis), প্রাতিষ্ঠানিক কৌশল নির্ধারন (কম-মূল্য-নেতৃত্ব অথবা সৃষ্টিশীল-পাথর্ক্য-মূলক অবস্থান) মানব সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, উদ্দিষ্ট ভোক্তা/ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ক্যাম্পেইন ডিজাইন ও পরিচালনা, পণ্য বা সেবার সহজ লভ্যতার জন্য সাপ্লাই-চেইন ব্যবস্থাপনা, প্রতিযোগীদের প্রতিদ্বন্দিতামূলক কার্যক্রমের প্রতি উত্তরে নিজের সক্ষমতা যাচাই এবং পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পরিকল্পনা প্রনয়ণ, সে অনুযায়ী উদ্দিষ্ট লক্ষ্যে কাযর্ক্রম পরিচালনা; এমনকি প্রতিযোগীতার স্বার্থে সমমনা অন্যদের সাথে জোটবদ্ধ হওয়া, প্রতিষ্ঠানের উত্তরোত্তর উৎকর্ষতার জন্য নেতৃত্বের গুণাবলী নির্ধারণ, কর্মীদের জন্য উন্নত কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করা, কর্মীদের জন্য প্রনোদনা ব্যবস্থা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রেক্ষিত ও তাদের প্রতিটির জন্য মৌলিক নির্দেশনা পাওয়া যায়।

যুদ্ধের অন্যান্য সব কৌশলের মধ্যে সবচেয়ে বাস্তব কৌশল হচ্ছে শত্রু রাজ্য অক্ষত এবং সম্পূর্ণ অবস্থায় কব্জা করা, শত্রু রাজ্য ছিন্ন-ভিন্ন এবং ধ্বংস করা তার চেয়ে নিকৃষ্টতর কাজ। (সান জু, দি আর্ট অব ওয়ার, অধ্যায় ৩: কৌশলী আক্রমণ)

সামরিক বাহিনীতে অন্তর্ভুক্তি পরীক্ষার সিলেবাসের অংশ হিসেবে পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে দি আর্ট অব ওয়ার পড়ানো হয়। চেয়ারম্যান মাও সে তুং-এর গেরিলা যুদ্ধ কৌশলে দি আর্ট অব ওয়ারএর প্রভাব আছে বলা হয়। Napoleon, Joseph Stalin, Fidel Castro এবং General Doglas McArthur যুদ্ধ কৌশল নির্ধারনে দি আর্ট অব ওয়ার ব্যবহার করেছেন। হো চি মিন ভিয়েতনামের মুক্তি সংগ্রামী বাহিনীতে এই বই পাঠ্য করেছিলেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধে জেনারেল সহ অনেক অধিনায়ক দি আর্ট অব ওয়ার মুখস্থ বলতে পারতেন। ভিয়েতনামে পরাজয় সান জু’কে মার্কিনীদের নজরে আনে।

সামরিক বাহিনীর বাইরে অনেকক্ষেত্রেই দি আর্ট অব ওয়ার –এর ব্যবহার দেখা যায়। বিশেষতঃ প্রতিযোগীতাপূর্ন অবস্থায় সরাসরি সম্মুখ যুদ্ধ এড়িয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য প্রশিক্ষনের বিষয় হিসেবে এর বহুল ব্যবহার লক্ষনীয়। অফিসের রাজনীতি এবং প্রতিষ্ঠানের কৌশল নির্ধারনে এর শিক্ষা খুব কাজে আসে। বহু জাপানিজ কোম্পানী তাদের শীর্ষকর্তাদের দি আর্ট অব ওয়ার  পাঠ্য করেছেন। পশ্চিমাদের কাছেও ব্যবস্থাপনা, কর্মীদের জন্য উদ্দিপনা এবং প্রতিযোগীতাপূর্ণ ব্যবসায়িক পরিবেশের জন্য উপদেশ হিসেবে এর ব্যবহার আছে।
ক্রীড়া ক্ষেত্রে দি আর্ট অব ওয়ার -এর ব্যবহার লক্ষনীয়। NFL coach Bill Belichick, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট, ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কোচ Luiz Felipe Scolari, Carlos Alberto Perreira একে ভালবাসতেন ও ব্যবহার করতেন।

যখন আমরা আক্রমনে সমর্থ্য, মনে করাতে হবে আমরা অক্ষম, যখন আমাদের বাহিনী সক্রিয়, তখন দেখাতে হবে আমরা নিস্ক্রীয়, যখন আমরা শত্রু-পক্ষের খুব কাছে, তখন শত্রুকে অবশ্যই বিশ্বাস করাতে হবে আমরা অনেক দূরে আছি, যখন আমরা অনেক দূরে, তখন তাদেরকে বিশ্বাস করাতে হবে আমরা একদম কাছে। (সান জু, দি আর্ট অব ওয়ার, অধ্যায় ১: পরিকল্পনা)

প্রায় ২৫০০ বৎসরের পুরানো সান জু’র দি আর্ট অব ওয়ার  গ্রন্থ কৌশলগত চিন্তা সহজতর করেছে । যুদ্ধ-বিগ্রহসহ, সাধারণ তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষনের মাধ্যমে সকল ধরনের প্রতিযোগীতা কমিয়েছে। সান জু’র মতে প্রতিদ্বন্দিতা হল তুলনামূলক বিচারে বিকল্প নির্বাচন । এদেরকে তিনি বলেন “প্রতিযোগীতামূলক অবস্থান” নির্ধারন। বিবাদমান পক্ষগুলো নিজেদের অবস্থানের ভিত্তিত্তে যুদ্ধ শুরুর আগেই জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়। অনুকূল অবস্থানে থাকলে অন্যরা আপনাকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস পায় না। বরং অনেকেই আপনাকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসে। সান জু’র পদ্ধতি আমাদেরকে নিজের ভাল অবস্থান তৈরি করে সবচেয়ে সহজ উপায়ে সফল হওয়া শেখায় ।

কোনদেশ-ই দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের সুফল পায় না। (সান জু, দি আর্ট অব ওয়ার, অধ্যায় ২: প্রতিদ্বন্দ্বিতা)

সান জু’র শিক্ষার সহজাত সৃজনশীল ক্ষমতা প্রতিদ্বন্দ্বিদের অবস্থান ও কার্যক্রম বিচার-বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে আমাদের প্রতিযোগীতামূলক সিদ্ধান্ত নিতে শেখায় । সান জু কিছু মৌলিক বিষয় চিহ্নিত করেছেন এবং সেগুলোকে নিজেদের অনুকূলে কাজে লাগানোর উপায়ও দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বি – প্রতিপক্ষকে হারানোর লক্ষ্যে ছিহ্ন-ভিন্ন করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল জয় । সহজতর উপায় হিসেবে বলেছেন, পারিপাশ্বির্ক পরিস্থিতির দিকে সজাগ দৃষ্টিরেখে নিজের অবস্থান সুসংহত করা ।

পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে নিশ্চিত সুরক্ষার ব্যবস্থা নিজের হাতে। কিন্তু শত্রুকে পরাজিত করার সুযোগ শত্রুপক্ষ নিজেই দিবে। (সান জু, দি আর্ট অব ওয়ার, অধ্যায় ৪: কৌশলী বিন্যাস)

বর্তমানের অত্যধিক ডিসরাপ্টিভ প্রতিযোগীতামূলক বিশ্বব্যবস্থায় আমরা সহজেই ধ্বংসাত্বক সিদ্বান্ত নিতে প্রলুদ্ধ হতে পারি। এমনকি সামান্য এক মুহুর্তের সিদ্ধান্ত আমাদের ভবিষ্যৎ অবস্থানে বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ সময় পারিপাশ্বির্ক অবস্থার পূর্ণজ্ঞান ছাড়াই আমরা এসব সিদ্ধান্ত নিই, কোনরুপ বাছ-বিচার ছাড়াই। আমরা শিখেছি, গত কালের পৃথিবীতে কি হয়েছিল তা-র বিবেচনায় “কি হওয়া উচিত”। আমাদের শিখানো হয় নাই আজকের পৃথিবীতে অনেক অনেক সিদ্ধান্ত কিভাবে নিতে হবে। আমাদের পরিকল্পনায় সরল রৈখিক পদ্ধতিতে শিখানো হয়, শিখানো হয় না কৌশলের দুনিয়ায় পরিবতির্ত অবস্থায় কিভাবে মানিয়ে নিতে হবে।

শত্রুপক্ষকে উত্তেজিত করুন; জানতে হবে তার কর্মকান্ড এবং নিষ্ক্রীয়তার নীতি। তাকে প্রকাশ করতে বাধ্য করুন, যাতে তার দূর্বলতম স্থান সমুহ চিহ্নিত করা যায়।
(সান জু, দি আর্ট অব ওয়ার, অধ্যায় ৬: দক্ষতা এবং দূর্বলতা)

স্থিতিশীল, নিয়ন্ত্রিত ও আভ্যন্তরিন পরিবেশে পূর্ব-পরিকল্পনা-মতে আদেশ পালনেই কর্মীদের দক্ষতা নিরুপিত হয়। সান জু’র মতে, জটিল, দ্রুত পরিবর্তনশীল এবং প্রতিদন্দ্বিতাপুর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু বিচার-বিশ্লেষনের মাধ্যমে বিকল্পসমূহের মধ্যে উত্তমটি বেছে নেয়াতেই প্রকৃত যোদ্ধার পরিচয় মিলে। সান জু’র নীতি সমুহ আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে অপ্রত্যাশিত ঘটনাসমুহ মানিয়ে নিতে শেখায়।

যুদ্ধে সবলস্থানকে এড়িয়ে দুর্বলস্থানে আঘাত করুন।
(সান জু, দি আর্ট অব ওয়ার, অধ্যায় ৬: দক্ষতা এবং দূর্বলতা)

আমরা এখন এমন এক পৃথিবীতে আছি যেখানে খুব কম সংখ্যক ঘটনা পূর্ব-পরিকল্পিত। আমাদের বেশিরভাগ সিদ্ধান্তই প্রতিযোগীর অবস্থানের বিচার-বিশ্লেষণ ব্যতিরেকে নেয়া। আমাদের বুঝতে হবে কিভাবে আমাদের বিকল্প নির্বাচন করা উচিত। ফলসরূপ, আমরা যত বার-ই জয় লাভ করি প্রায় তত বার-ই হেরে যাই, কারণ সামঞ্জস্যপূর্ন অগ্রগতি ধরে রাখতে পারি না। আমাদের চারপাশে ঘটনার প্রাচূর্য। আমরা একবার একদিকে তো অন্যবার অন্যদিকে চেষ্টা করি। অনেক সময় আমরা পূর্ববর্তী ভুলের পুনরাবৃত্তি করি।

“রাজত্ব একবার ধ্বংস হলে তা আর কখনোই ফিরিয়ে আনা যায় না। তেমনি মৃতকে কোন দিন জীবন ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব নয়”।
(সান জু, দি আর্ট অব ওয়ার, অধ্যায় ১২: আগুন দিয়ে আক্রমণ)

এটা এমনই এক গ্রন্থ যা কমিউনিস্ট নেতা মাও সেতুং ও জাতীয়তাবাদী নেতা চিয়াং কাইসেক এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানি জেনারেলদের কৌশলী চিন্তার বিন্যাসে সহায়তা করেছে।
প্রতিবেশি অন্যপক্ষের অভিসন্ধি সম্পর্কে পূর্ণজ্ঞান না রেখে জোটবদ্ধ হওয়া যায় না। প্রতিপক্ষদেশ সম্পর্কে সম্যক ধারনা না হওয়া পর্যন্ত সামরিক অগ্রযাত্রা পরিচালনার উপযুক্ত নয়। (সান জু, দি আর্ট অব ওয়ার, অধ্যায় ১১: নয় পরিস্থিতি )

ব্যবসা-বাণিজ্যে দি আর্ট অব ওয়ার-এর প্রয়োগ প্রতিষ্ঠানের কৌশল নির্দ্দিষ্ট করার সাথে সাথে সঠিক নেতৃত্ব, যোগ্য কর্মী নিয়োগ দেয়া, বাজার ও প্রতিযোগী নির্ধারন এবং প্রয়োজনে সরাসরি মোকাবেলা এড়িয়ে যাওয়া, আক্রমণের ক্ষেত্রে সবলের চেয়ে দূর্বলস্থানে আঘাত করা এবং আক্রমন ও এর প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত পদক্ষেপের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে প্রাতিষ্ঠানিক সফলতা নিশ্চিত করার দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়।

কোন শাসকেরই শুধু নিজের আক্রোশ চরিতার্থ করার জন্য সৈন্য বাহিনীকে যুদ্ধে পাঠানো উচিত নয়। কোন সেনাপতিরই বিদ্বেষ বশতঃ যুদ্ধ বাঁধানো উচিত নয় । (সান জু, দি আর্ট অব ওয়ার, অধ্যায় ১২: আগুন দিয়ে আক্রমণ)

You may subscribe a copy https://goo.gl/gFV2Tf


Posted

in

, ,

by

Tags:

Comments

One response to “অবিস্মরণীয় সমর কৌশলী সান জু”

  1. Justin Avatar

    Wonderful article! That is the kind of info that should be shared
    across the web. Shame on the search engines for now not positioning this submit
    upper! Come on over and seek advice from my
    site . Thank you =)

    P.S. If you have a minute, would love your feedback on my new website re-design. You can find it by searching for “royal cbd” – no sweat if you can’t.

    Keep up the good work!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *