গত ১১ জানুয়ারি ২০২০ চীনের উহানে (WHO ও সরকারীভাবে) প্রথম সনাক্ত হওয়ার পর থেকে আজ (৯ এপ্রিল, দুপুর ২ টা) পর্যন্ত ১৩ লক্ষ ৯৫ হাজারের অধিক মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৮১ হাজার ৫৮০ জন মৃত্যু বরন করেছেন (worldometers, coronavirus, 2020)। বিশ্বব্যাপি ১১০টি দেশের লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হলে করোনা (COVID – 19) প্রাদুর্ভাবকে জাতি সংঘের (UN) অংগ সংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) গত ১১ মার্চ ২০২০ বৈশ্বিক বিপর্যয় (Pandemic) ঘোষনা করে (DUCHARME, 2020)। যদিও চীনের উহানে প্রথম এর প্রাদুর্ভাবের কথা বলা হচ্ছে ৮ ডিসেম্বর ২০১৯ থেকেই (Davidson, 2020)। এ পর্যন্ত ২০৯টি দেশ করোনাভাইরাস (COVID – 19)-এ আক্রান্ত (worldometers, countries, 2020)।
মানুষ থেকে মানুষে হাঁচি-কাশির ও সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অদৃশ্য এবং আক্রান্ত ব্যক্তির অজানা (প্রথমদিকের কয়েকদিন) করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রোধ করার জন্য স্বাস্থ্যবিদরা সাধারণ মানুষের কিছু আচরনবিধি মেনে চলার জন্য বলেন। যেমনঃ সাবান পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া, হাতে গ্লাবস ব্যবহার করা, মুখ ঢেকে রাখার জন্য ভাইরাস-রোধক মাস্ক ব্যবহার করা, একজন আরেকজন থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা অথবা ঘরে অবস্থান করা। লোকসমাগমে যেতে বারন করা হয়। এসবের পরও মৃত্যুর মিছিল থামানো যাচ্ছে না।
করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত বৃটেনের রানী, প্রিন্স চার্লস ও প্রধানমন্ত্রী, জার্মানীর চ্যান্সেলর, সৌদি প্রিন্স, বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, খেলোয়াড়, ক্রীড়াবিদ অসংখ্য প্রখ্যাত ব্যক্তি সহ ১৫ লক্ষাধিক ব্যাক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। আপাততঃ করোনাকে মনে হচ্ছে কোন ইতর – ভদ্র, আমির – ফকির, ধনতন্ত্রী – সমাজতন্ত্রী, সাদা – কালো না মানা সম্পূর্ণ গনতান্ত্রিক বালাই।
ধারণা করা হচ্ছে, এক বাদুড় থেকে বনরুই হয়ে মানবদেহে প্রবেশ করে আজ বিশ্বজুড়ে মানুষকে শুধু আতঙ্কিতই নয় পুরো অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডকে স্থবির করে ফেলেছে। তাই এর মোকাবিলায় প্রথমেই আমাদের যে জিনিসটা বোঝা দরকার তা হলো, কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস কোনো ব্যক্তিবিশেষের রোগ নয়, যা শুধু চিকিৎসায় ভালো হবে। এটি একটি সামষ্টিক রোগ। তাই একে যৌথ অংশীদারত্বের মোকাবিলা করতে হবে।
নিকট অতীতে, করোনার আগে আমরা আরও ভয়ংকর সব ভাইরাসের আক্রমণ দেখেছি — ইবোলা, সার্স, মার্স, নিপাহ ইত্যাদি। এদের মারণক্ষমতা যথেষ্ট হলেও সংক্রমণ ছোট অঞ্চলে সীমিত ছিল এবং কম সময়ে নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছিল।
ভাইরাসের নাম | মৃত্যু হার |
Wuhan Novel Coronavirus (2019-nCoV) | 2%* |
SARS | 9.6% |
MERS | 34% |
Swine Flu | 0.02% |
2 সাম্প্রতিক ভাইরাস *estimate of WHO, (Ref: (worldometers, coronavirus death rate, 2020)
কিন্তু করোনায় মৃত্যুঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম হলেও এর ছড়ানোর ক্ষমতা মারাত্মক। তা ছাড়া বৃদ্ধ এবং অন্যান্য কঠিন রোগে ভুগে বা অন্য রোগ অনিয়ন্ত্রিত থাকলে তাঁদের জন্য মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি। তাতে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়লে এ রোগে মৃত্যুহার বাড়বেই। ইউরোপের জনমিতিতে বয়স্ক মানুষ বেশি থাকায় ইতালি ও স্পেনে মৃত্যুহার ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তা ছাড়া করোনার আগে যেমন সাম্প্রতিককালে মারাত্মক ধরনের নতুন নতুন ফ্লু মানুষকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে, তেমনটা করোনার পরও ঘটবে, এমন বার্তা দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। ফলে বিশ্ববাসীকে করোনার বার্তাগুলো নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে এবং ভবিষ্যতের করণীয় ঠিক করতে হবে।
করোনাভাইরাস স্মরণকালের প্রথম একটি মহামারি, যা সারা বিশ্বে অ্যান্টার্কটিকা ব্যতীত সব মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। চীন থেকে এ রোগের সূচনা, সুনির্দিষ্টভাবে বললে সে দেশের একটি প্রদেশেই মূলত সংক্রমণ সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ শুরুর আগেই সংক্রমণের হার পৌঁছে যায় আশি হাজারের ওপরে। তবে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও অত্যন্ত কার্যকর ব্যবস্থাপনায় তারা সংক্রমণের গতি সেখানেই থামাতে পেরেছে। তত দিনে উহানে মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৩০৫ জনের, যাদের অধিকাংশই বয়স্ক মানুষ। অর্থাৎ মৃত্যুহার বিশেষজ্ঞদের ধারণা অনুযায়ী ২ শতাংশের নিচে না থেকে ৪ শতাংশের ওপরে উঠেছে। এরই মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে চীনের আশপাশে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও মালয়েশিয়ায়। ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ইউরোপ, বিশেষভাবে ইতালি, স্পেন ও যুক্তরাজ্যে; ফ্রান্স, বেলজিয়ামও সংক্রমণ এবং মৃত্যুতে পিছিয়ে নাই। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের মধ্যে ইরানও ভয়াভহ করোনাভাইরাস সংক্রমনের শিকার। করোনার আগে মহামারির জন্য বিশ্বব্যাপি শহরের পর শহর লকডাউন হতে কখনো দেখা যায় নাই।
সরকারগুলো দেশে দেশে বিভিন্ন ধরনের কর্মসুচির মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে শারিরিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা গ্রহন করে। সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে লকডাউন বা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সবকিছু, অফিস – আদালত, কল – কারখানা, দোকান, শপিংমল, সিনেমা, রেস্তোরা, হোটেল, ক্লাব, জন – পরিবহন ইত্যাদি বন্ধ করে দেন। বন্ধ করে দেয়া হয় বিভিন্ন উপাসনালয়, মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ইত্যাদি। কোথাও কোথাও বাহিরমুখী মানুষকে ঠেকাতে কারফিউ দেওয়া হচ্ছে, কোথাও আমলা, সামরিক বাহিনী ও পুলিশি তৎপরতা সীমা ছাড়িয়েছে। আবার কোথাও পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকেরা জরুরি সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছেন।
এ মহাদূর্যোগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার গুলোর অন্তত দু’টা পথ খোলা ছিল। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জনগনের মৃত্যু মেনে নেয়ার বিনিময়ে দেশের অর্থনীতি সচল রাখা। অথবা অর্থনীতির মন্দাকে মেনে নিয়ে, দেশের মালিক জনগনের জীবন বাঁচানো। আপাত খোলা এ দুই বিষয় থেকে পছন্দ করে নেয়া বুঝার জন্য আমরা বাংলাদেশের উদাহরন নেই। ধরে নেই, বাংলাদেশ সরকার যদি লকডাউন বা সাধারন ছুটি ঘোষনা না করে, মসজিদ, মন্দিরসহ অফিস – আদালত, কল – কারখানা, দোকান, শপিংমল, সিনেমা, রেস্তোরা, হোটেল, ক্লাব, জন – পরিবহন ইত্যাদি চালু রাখত। তাহলে কি হতে পারত? বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালু থাকত। সবাই আমরা যে যে কাজে জড়িত ছিলাম তাই করতাম। সবার আয় রোজগারের পথ খোলা থাকত। হয়ত অনেকের বেড়াতে যাওয়ার প্লান ছিল। তারাও বেড়াতে যেত। তাহলে কি আসলেই সকল কাজ-কর্ম স্বাভাবিক থাকত? ইউরোপ, আমেরিকায় করোনার কারনে সব বন্ধ করায়, পোষাক শিল্পে ৩শ কোটি মার্কিন ডলারের (বা ২ হাজার ৫৫০ কোটি টাকারও বেশি) কার্যাদেশ বাতিল করেছে তাকি রোধ করা যেত? অবশ্যই না। কারন ক্রেতারা তাদের নিজেদের সমস্যার কারনে, তাদের বাজার বন্ধ হওয়ার কারনে, ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত করেছেন। যেহেতু তারা আমাদের আগেই করোনায় আক্রান্ত, তারা দেখতে পাচ্ছে, অদূর ভবিষ্যতে কি হতে যাচ্ছে। তারা তাদের কার্যাদেশ বাতিল করেছে। এতে আমাদের দেশের ২য় সবোর্চ্চ উপার্জনকারী খাত পোষাক শিল্পে নিয়োজিত প্রায় ৩০লক্ষ পরিবারের আয় সরাসরি হুমকিতে পড়ল। যেহেতু আমরা সকল উৎপাদনে বৈশ্বিক যোগাযোগ ও সমন্বয়ের অধীন, এ পরিস্থিতি থেকে নিজেদের রক্ষার কোন আলাদা উপায় নাই। তাই মানুষের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও, সবকিছু খোলা রেখেও আমরা বৈশ্বিক মন্দাকে এড়িয়ে যেতে পারতাম না। অন্যদিকে, সকল কর্মক্ষম মানুষ অর্থনৈতিক কাজে জড়িত থাকার কারনে, সবাই সবার স্বাভাবিক সংস্পর্শে থাকার কারনে, অতি অল্প সময়ের মধ্যে অসংখ্য মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে পরিবারের অন্যদেরও আক্রান্ত করত। এভাবে গাণিতিক নিয়মে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ আমাদের এ প্রিয় মাতৃভূমির সকল মানুষ আক্রান্ত হওয়া খুব অল্প সময়ের ব্যাপার ছিল। আবার, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারনে মানুষজন বা কর্মীবাহিনী আগের মত উদ্যোমে কাজ করতে না পারলেও অর্থনীতির চাকা চালু রাখত। কারন সব মানুষতো আর একদিনে অসুস্থ হত না। তাই অর্থনীতির চাকা হয়ত চালু থাকত কিন্তু তা অনেক বেশি মানুষের মৃত্যুর কারন হত। এ বিষয়টাকে নিচের গ্রাফের মাধ্যমে বুঝানো যায়।
Ref: (aljazeera, 2020) |
আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থানের হার খুবই কম। এদেশের কর্মজীবীদের বড় অংশটি হয় স্বনিয়োজিত পেশায় আছেন অথবা অনানুষ্ঠানিক সেক্টরে কাজ করেন। যাঁরা প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন, তাঁদের একটা ক্ষুদ্র অংশ নানা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকুরে। তাঁরা নিয়মিত বেতন-ভাতা পান, উৎসব বোনাস পান, দুর্যোগের সময় সবেতন ছুটি পান, অবসরে গেলে পেনশন পান। তাঁদের জীবন খুবই সুরক্ষিত। দেশের কর্মজীবীদের বড় অংশটি, বলা যায় প্রায় শতকরা ৮৫ ভাগ, কিংবা তার চেয়েও বেশি, অনানুষ্ঠানিক সেক্টরে কাজ করেন। তাঁদের একটা অংশ চাষবাস করেন। এর বাইরে আছেন অগণিত রিকশাচালক, পরিবহনশ্রমিক, ফেরিওয়ালা, রেস্তোরাঁশ্রমিক, নির্মাণশ্রমিক, বাসাবাড়ির বুয়া-দারোয়ান-ড্রাইভার। তাঁদের কারও নিয়োগপত্র নেই, নিয়মিত আয় নেই, অবসরে পেনশন নেই। যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ। তাঁদের শ্রমের চাহিদা প্রধানত শহর এলাকায়। এ মানুষগুলো আছেন উভয় সংকটে। কাজে থাকলে করোনার আক্রমন। কাজ বন্ধ করায় বাসায় থাকলে ক্ষুধার আক্রমন। আবার অনেকেরতো থাকার বাসাও নাই। এ পরিস্থিতিতে, মানুষের মধ্যে করোনা সংক্রমন ঠেকানোর জন্য, মানুষের অহেতুক মৃত্যু রোধ করার জন্য, সকল জন-জমায়েত (অর্থনৈতিক এবং অ-অর্থনৈতিক) বন্ধ করে, অর্থনৈতিক মন্দাকে অবিশ্যম্ভাবি বলে মেনে নেয়া। আমাদের বাংলাদেশ সরকার জনগনের অমূল্য জীবনের মূল্য দিয়েছেন। মেনে নিয়েছেন অর্থনৈতিক মন্দা। আবার এই অর্থনৈতিক মন্দাকালে জনদূর্ভোগ লাগবের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন। বিভিন্ন গোষ্ঠিকে লক্ষ্য করে ঘোষনা করেছেন প্রনোদনা প্যাকেজ।
এ মহাবিপর্যয়ে জরুরী অত্যাবশ্যকীয় খাত সমুহ ছাড়া সকল কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানুষের কর্মকান্ডে এ বিরাট পরিবর্তন আসে। উন্নয়নশীল বা উন্নত সব দেশে এরুপ পরিস্থিতির কারনে বিভিন্নপ্রকার কর্মী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। বিশ্বের সমস্ত শ্রমজীবিদের ৮১% বা ৩৩০ কোটি মানুষ এতে সরাসরি প্রভাবিত। বিশ্বের প্রায় ৮০% ভাগের অধিক মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্ম বাধাগ্রস্ত হয়েছে, কাজের স্থানের পরিবর্তন হয়েছে আবার অনেকের কাজের সময়ও কমেছে।
Ref: https://www.bbc.com/news/business-52199888
এই আকস্মিক লকডাউনে অর্থনীতির বিভিন্ন সেক্টর অভাবনীয় ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে সেবা খাতের আবাসিক হোটেল, ভ্রমন, রেস্তোরা। এদের সাথে আরও আছে উৎপাদন খাত, পাইকারি, খুচরা ও আবাসন খাত। এসব সেক্টরে প্রায় ১৩৮ কোটি কর্মী কাজ করে যা বিশ্বের মোট শ্রম বাজারের ৩৮%। আবার এসব সেক্টরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে খুচরা ব্যবসা ও উৎপাদনখাতের শ্রমিকেরা।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী করোনাভাইসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির পূর্ভাবাস দিয়েছে। তাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাস আক্রান্ত প্রবন দেখানো হয়েছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য কি অপেক্ষা করছে?
তথ্যসূত্রঃ
aljazeera. (9 April 2020). Start here. aljazeera: https://www.aljazeera.com/programmes/start-here/2020/04/global-economy-recover-covid-19-start-200407095907239.htm
bbc. (9 April 2020). Business. bbc: https://www.bbc.com/news/business-52199888
Helen Davidson. (9 April 2020). World, Coronavirus outbreak. Guardian: https://www.theguardian.com/world/2020/mar/13/first-covid-19-case-happened-in-november-china-government-records-show-report
JAMIE DUCHARME. (9 April 2020). HEALTH, COVID-19. Time: https://time.com/5791661/who-coronavirus-pandemic-declaration
worldometers. (9 April 2020). coronavirus. worldometers: https://www.worldometers.info/coronavirus/
worldometers. (9 April 2020). coronavirus death rate. worldometers: https://www.worldometers.info/coronavirus/coronavirus-death-rate/
worldometers. (10 April 2020). countries. worldometers: https://www.worldometers.info/coronavirus/#countries
Leave a Reply