করোনাভাইরাস: যা জানা প্রয়োজন

coronavirus_structure
করোনাভাইরাস

করোনাভাইরাস: যা জানা প্রয়োজন

 

করোনাভাইরাস, যার আসল নাম কোভিড-১৯, রোগটিকে বিশ্ব-মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

অভূতপূর্ব এই ভাইরাস যা মানুষের ফুসফুসের মারাত্মক সংক্রমন সৃষ্টি করে – চীন থেকে এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের ১৮৫টির বেশী দেশে।

 

করোনাভাইরাসটা কী?

করোনাভাইরাস একটি সংক্রামক ভাইরাস – যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি।

এই ভাইরাস ১৮৫টি দেশে ছড়িয়েছে, বিশ্বব্যাপী প্রাণহানি হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজারের বেশি মানুষের (এপ্রিল ২৩, ২০২০)।

JHU
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের বিস্তার। ২৪শে এপ্রিল ২০২০। সূত্রঃ https://coronavirus.jhu.edu/map.html

বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা ২৭ লাখ ৯ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে আমেরিকায় আক্রান্তের সংখ্যা অন্য দেশের তুলনায় দ্বিগুণ। বিশ্বব্যাপী মোট আক্রান্তের অর্ধেকই ইউরোপে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে স্পেন ও ইতালিতে।

 

২০০২ সাল থেকে চীনে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্স (সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামের ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৭৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল আর ৮,০৯৮ জন সংক্রমিত হয়েছিল। সেটিও এক ধরণের করোনাভাইরাস ছিল।

নতুন এই রোগটিকে প্রথমদিকে নানা নামে ডাকা হচ্ছিল, যেমন: ‘চায়না ভাইরাস’, ‘করোনাভাইরাস’, ‘২০১৯ এনকভ’, ‘নতুন ভাইরাস’, ‘রহস্য ভাইরাস’ ইত্যাদি।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটির আনুষ্ঠানিক নাম দেয় কোভিড-১৯ যা ‘করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ।

রোগের লক্ষণ এবং মৃত্যুহার

শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমন ছাড়াও জ্বর, কাশি, শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যাই মূলত প্রধান লক্ষণ। করোনাভাইরাস ফুসফুসেও আক্রমণ করে। সাধারণত শুষ্ক কাশি ও জ্বরের মাধ্যমেই শুরু হয় উপসর্গ, পরে শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত রোগের উপসর্গগুলো প্রকাশ পেতে গড়ে পাঁচ দিন সময় নেয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ভাইরাসটির সংক্রমন – লক্ষন ১৪দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। তবে কিছু কিছু গবেষকের মতে এর স্থায়িত্ব ২৪দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।

মানুষের মধ্যে যখন ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেবে তখন বেশি মানুষকে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকবে তাদের। তবে এমন ধারণাও করা হচ্ছে যে নিজেরা অসুস্থ না থাকার সময়ও সুস্থ মানুষের দেহে ভাইরাস সংক্রমিত করতে পারে মানুষ। শুরুর দিকের উপসর্গ সাধারণ সর্দিজ্বর এবং ফ্লু’য়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্থ হওয়া স্বাভাবিক।

জ্বর দিয়ে ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়, এরপরে শুকনো কাশি দেখা দিতে পারে। প্রায় এক সপ্তাহ পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। অনেক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হয়।

এখন পর্যন্ত এই রোগে মারা যাওয়ার হার কম (২% থেকে ২% এর মধ্যে) – তবে এই পরিসংখ্যান পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য নয়।

ইউরোপের কোন কোন অঞ্চলে এখন ১০% এর অধিক মৃত্যুহারও দেখা যাচ্ছে।

 

কোথা থেকে এলো করোনাভাইরাস?

করোনাভাইরাস ভাইরাস পরিবারে আছে, এ ধরণের ছয়টি ভাইরাস আগে পরিচিত থাকলেও এখন যে ভাইরাসে মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে সেটি নতুন। উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়, যদিও ১৯৬০ সালে ই সি ক্যান্ডাল, মেকম বিয়ন এবং ডেভিড টিরেল প্রথম করোনা ভাইরাস আবিস্কার করেন ব্রিটিশ  মেডিকেল রিসার্স কাউন্সিলের ল্যাবে। তখন এ করোনাভাইরাসের নাম রাখা হয়েছিল ‘কমন কোল্ড ভাইরাস বি৮১৪’।

অনেক সময় কোন একটি প্রাণী থেকে এসে নতুন নতুন ভাইরাস মানব শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা সাম্প্রতিক ভাইরাসটির উৎস কোনো প্রাণী। যতটুকু জানা যায়, মানুষের আক্রান্ত হবার ঘটনাটি ঘটেছে চীনের উহান শহরে সামুদ্রিক মাছ পাইকারিভাবে বিক্রি হয় এমন একটি বাজারে।

যদিও বেশ কিছু সামুদ্রিক প্রাণী করোনাভাইরাস বহন করতে পারে (যেমন বেলুগা তিমি), ওই বাজারটিতে অনেক জীবন্ত প্রাণীও পাওয়া যেত, যেমন মুরগি, বাদুড়, খরগোশ, সাপ- এসব প্রাণী করোনাভাইরাসের উৎস হতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, চীনের হর্সশু নামের একপ্রকার বাদুড়ের সঙ্গে এই ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে।

কীভাবে ভাইরাসটি ঠেকানো যেতে পারে?

এই রোগ থেকে এখন পর্যন্ত রক্ষার একমাত্র উপায় হলো অন্যদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ হতে না দেয়া।

 

Symptoms
করোনাভাইরাসের লক্ষনসমুহ

 

সংক্রমণ  প্রতিরোধ করা যেতে পারে নিম্নোক্তভাবেঃ

  • মানুষজনের চলাচল সীমিত করে দেয়া। অত্যন্ত জরুরীকাজে বাইরে যাওয়া লাগলে সামাজিক দুরত্ব হিসেবে অন্ততঃ ৩ ফুট দুরত্ব বজায় রাখা।
  • অন্ততঃ ২০ সেকেন্ড সাবান পানি দিয়ে হাত ধুতে সবাইকে উৎসাহিত করা।
  • স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরে রোগীদের আলাদা আলাদা করে চিকিৎসা সেবা দেয়া
protective
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ-ই উত্তম। করোনাভাইরাস রোধে অভ্যাস করুন, সুস্থ থাকুন।

রোগীদের ভাইরাস রয়েছে কিনা তা জানতে এবং রোগীদের সংস্পর্শে আসা লোকদের শনাক্ত করার জন্যও  নজরদারি ব্যবস্থার প্রয়োজন।

বিশ্বের বহু দেশেই সংক্রমণ ঠেকানোর একটি জনপ্রিয় ব্যবস্থা হচ্ছে মাস্ক ব্যবহার। তবে হাত থেকে মুখে সংক্রমণ ঠেকাতে এই মাস্ক ব্যবহার করে সুফল পাওয়ার কিছু নজির আছে।

তাই করোনাভাইরাসের সর্বোত্তম প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা হচ্ছে ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন।

 

বাংলাদেশ কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?

বিশ্বের অন্য অনেক দেশের মত বাংলাদেশও করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।

মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ২৬শে মার্চ থেকে ২৫শে এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। এই সাধারন ছুটি বাডিয়ে ৫ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। এসময় ওষুধের ও জরুরি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের দোকান বাদে দেশের সকল বিপণিবিতান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এই ছুটির মধ্যে যেন মানুষ নিজেদের ঘরে থাকে এবং জনসমাগম এড়িয়ে চলে, তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাস্তায় রয়েছে।

১লা এপ্রিল থেকে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার কাজে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে সেনাবাহিনীও নিয়োজিত থাকবে।

এর আগেই দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং ইংল্যান্ড ছাড়া ইউরোপের সব দেশ থেকে যাত্রী আসায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। অন্য অনেক দেশের সাথেও বিমান চলাচল স্থগিত রয়েছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা বিভাগের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে যেন বিদেশ ফেরত যাত্রীরা হোম কোয়ারেন্টিন, সেল্ফ কোয়ারেন্টিন বা আইসোলেশনের নিয়মকানুন মেনে চলেন।

আপনার যদি করোনাভাইরাস লক্ষন আছে মনে হয়, টেস্ট করার জন্য সরকারী স্বাস্থ্যবাতায়নে ফোন করুন। ফোন নম্বর ৩৩৩, ১৬২৬৩।

Hotline

বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্যবাতায়নে বিনামূল্যে ফোন করুন

করোনাভাইরাস বিষয়ক তথ্য পেতে এবং সম্ভাব্য আক্রান্ত ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য পেতে corona.gov.bd ওয়েবসাইট ভিজিট ক্রুন।

স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তর COVID-19 নামে +৮৮০১৬৭৮৩৮০০৫৬ নম্বরে WhatsAppএ তথ্য সেবা চালু করেছে। নম্বরটি মোবাইল ফোনের কন্টাক্ট নং হিসেবে সেভ করে ইংরেজীতে Hello অথবা বাংলায় ‘হ্যালো’ লিখে সেবাটির সাথে সংযুক্ত হতে হবে। এই সেবার মাধ্যমে সহজে সর্বশেষ তথ্য ও বিভিন্ন সেবা পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস টেস্ট চিকিৎসা

 

টেস্ট সেন্টার

ঢাকায় ১০টি টেস্ট সেন্টার চালু করা হয়েছে।

১। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (IEDCR), মহাখালী, ঢাকা। ফোন নং 02-9898796,

২। ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ (জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট), মহাখালী, ঢাকা। ফোন নং 02-8821361

৩। আইসিডিডিআরবি, মহাখালী, ঢাকা। ফোন নং 09666-771100,

৪। আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজি (AFIP), ঢাকা ক্যান্টনম্যান্ট (সামরিক বাহিনীর জন্য)। মোবাইল নং 01769-016616

৫। শিশু স্বাস্থ্য গবেষণা ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ), ঢাকা শিশু হাসপাতাল, শের-ই বাংলা নগর, ঢাকা। ফোন নং 02-48110117

৬। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা। ফোন নং 02-55165088

৭। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), শাহবাগ, ঢাকা। মোবাইল নং 01866-637482

৮। আইডিইএসএইচআই (আইদেশী-IDESHI), মহাখালী, ঢাকা। মোবাইল নং 01793-163304

৯। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ল্যাবরেটরি মেডিসিন, শের-ই বাংলা নগর, ঢাকা। ফোন নং 02-9139817

১০। মুগদা মেডিকেল কলেজ, মুগদা, ঢাকা। মোবাইল 01553-306518

 

ঢাকার বাইরে ১১টি টেস্ট সেন্টার চালু করা হয়েছে।

১। ককসবাজার মেডিকেল কলেজ (IEDCR field Lab)। মোবাইল নং 01821-431144

২। রংপুর মেডিকেল কলেজ। ফোন নং 0521-63388

৩। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ। ফোন নং 0721-772150

৪। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ। ফোন নং 091-66063

৫। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (BITID), ফৌজদারহাট, চট্টগ্রাম। ফোন নং 031-2780426

৬। সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ। ফোন নং 0821-713667

৭। খুলনা মেডিকেল কলেজ। ফোন নং 041-760350 এবং

৮। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ। ফোন নং 0431-2173547

৯। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ। ফোন নং 0631-61744

১০। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, বগুড়া। ফোন নং 051-69300

১১। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ফোন নং 0421-61333

 

করোনাভাইরাস চিকিৎসা

১। কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারী হাসপাতাল। সেক্টর ৬, উত্তরা, ঢাকা ১২৩০, মোবাইল 01999-956290

২। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুর্মিটোলা, ঢাকা। মোবাইল 01769010200

৩। বাংলাদেশ রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল, কমলাপুর, ঢাকা। ফোন 02-55007420

৪। মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, নয়াবাজার, ঢাকা ১১০০। ফোনঃ 02-57390860, 7390066

৫। মিরপুর মেটারনিটি হাসপাতাল, বড়বাগ রোড ২। ফোন 02-9002012

৬। কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যা হাসপাতাল। লালবাগ, ঢাকা। ফোন 01726321189

৭। আমিনবাজার ২০ শয্যা হাসপাতাল। সাভার, ঢাকা। ফোন 01700000000, 01712290100

৮। জিনজিরা ২০ শয্যা হাসপাতাল। কেরানীগঞ্জ।

৯। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ফোন 01819 220180

১০। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা। মোবাইল 01819221115

১১। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। শের-ই বাংলা নগর, ঢাকা। ফোন 02-8144048

 

ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন।

where-to-get-treatment-for-corona


Posted

in

,

by

Tags:

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *