ঘুর্নিঝড়ের বিভিন্ন সংকেতের অর্থ – মানে এবং ঝড়ের মাত্রা ও ক্ষয়ক্ষতি ভিন্ন ভিন্ন রকমের।
ঘূর্ণিঝড়সহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে আবহাওয়া অধিদপ্তর কিংবা স্থানীয় প্রশাসন নানা ধরনের সতর্কসংকেত প্রচার করে। সতর্কসংকেত জাতীয়ভাবে জাতীয় গনমাধ্যম যেমন, রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র ইত্যাদির পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে মাইকিং করে প্রচার করা হয়ে থাকে। এ ধরনের প্রচারনার মাধ্যমে স্থানীয় এলাকাবাসীকে বা উপদ্রুত এলাকার জনগনকে ঘুর্নিঝড় সম্পর্কে সতর্ক করা হয়। কিন্তু উপকূলের অধিকাংশ মানুষই তা বোঝেন না। তাই তাঁরা ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চান না। আর এতে বেশি ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে হয় তাঁদের। আসুন তাই জেনে নিই, কোন সংকেতের মানে কী।
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, দুর্যোগ-পূর্ববর্তী এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন সংকেত মাইকে প্রচার করা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—
দূরবর্তী সতর্কসংকেত
দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত
স্থানীয় সতর্কসংকেত
স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত
বিপৎসংকেত
মহাবিপৎসংকেত ও
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেত।
ঝড়ের সময় আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া সমুদ্রবন্দরের ক্ষেত্রে ১১টি এবং নদীবন্দরের ক্ষেত্রে ৪টি সংকেত নির্ধারিত আছে। এই সংকেতগুলো সমুদ্রবন্দর ও নদীবন্দরের ক্ষেত্রে ভিন্ন বার্তা বহন করে।
নদীবন্দরের জন্য চারটি সংকেত
১ নম্বর নৌ সতর্কতা সংকেত
বন্দর এলাকা ক্ষণস্থায়ী ঝোড়ো আবহাওয়ার কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিবেগের কালবৈশাখীর ক্ষেত্রেও এই সংকেত দেখানো হয়। এই সংকেত আবহাওয়ার চলতি অবস্থার ওপর সতর্ক নজর রাখারও তাগিদ দেয়।
২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত
বন্দর এলাকায় নিম্নচাপের সমতুল্য তীব্রতার একটি ঝড়, যার গতিবেগ ঘণ্টায় অনূর্ধ্ব ৬১ কিলোমিটার বা একটি কালবৈশাখী, যার বাতাসের গতিবেগ ৬১ কিলোমিটার বা তদূর্ধ্ব। নৌযান এদের যেকোনোটির কবলে নিপতিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ৬৫ ফুট বা তার কম দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট নৌযানকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে।
৩ নম্বর নৌ বিপৎসংকেত
বন্দর এলাকা ঝড়ে কবলিত। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ একটানা ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিবেগের একটি সামুদ্রিক ঝড় শিগগিরই বন্দর এলাকায় আঘাত হানতে পারে। সব নৌযানকে অবিলম্বে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে।
৪ নম্বর নৌ মহাবিপৎসংকেত
বন্দর এলাকা একটি প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার সামুদ্রিক ঝড়ে কবলিত এবং শিগগিরই বন্দর এলাকায় আঘাত হানবে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তদূর্ধ্ব। সব ধরনের নৌযানকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।
সমুদ্রবন্দরের জন্য ১১টি সংকেত
১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত
জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সম্মুখীন হতে পারে। দূরবর্তী এলাকায় একটি ঝোড়ো হাওয়ার অঞ্চল রয়েছে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬১ কিলোমিটার। ফলে সামুদ্রিক ঝড়ের সৃষ্টি হবে।
২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত
গভীর সাগরে একটি ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। বন্দর এখনই ঝড়ে কবলিত হবে না, তবে বন্দর ত্যাগকারী জাহাজ পথে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা আছে।
৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত
বন্দর ও বন্দরে নোঙর করা জাহাজগুলোর দুর্যোগ কবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্দরে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণি বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার হতে পারে।
৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত
বন্দর ঘূর্ণিঝড়–কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১ থেকে ৬১ কিলোমিটার। তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক সময় হয়নি।
৫ নম্বর বিপৎসংকেত
বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতর এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়বে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরকে বাঁ দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
৬ নম্বর বিপৎসংকেত
বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়বে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
৭ নম্বর বিপৎসংকেত
বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়বে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরের ওপর বা এর কাছ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত
বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা এর বেশি হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরকে বাঁ দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।
৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত
বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়বে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা এর বেশি হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।
১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত
বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়বে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তার বেশি হতে পারে।
১১ নম্বর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেত
আবহাওয়ার বিপৎসংকেত প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং স্থানীয় আবহাওয়া কর্মকর্তা পরিস্থিতি দুর্যোগপূর্ণ বলে মনে করেন।
ঘূর্নিঝড়ের সংকেত প্রচার
সংকেত প্রচার পদ্ধতি
ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি আবহাওয়ার সংকেত নিম্মলিখিত ধাপে সম্পন্ন করে থাকে –
সংকেত নম্বর ১ থেকে ৩ হলে
ক) একটি ঘূর্ণিঝড় সৃস্টি হয়েছে- জনসাধারণকে প্রস্তত থাকার জন্য স্বেচ্ছাসেবকগণ মুখে মুখে ঘূর্ণি ঝড়ের সংকেত প্রচার করবেন এবং একে অপরকে জানাবেন।
খ) ঘূর্ণি ঝড়ের সর্বশেষ সংবাদ জানার জন্য নিয়মিত রেডিও শুনুন এবং টেলিভিশন দেখুন।
সংকেত নম্বর ৪ হলে
ক) মেগাফোন এবং মাইক দ্বারা উচ্চস্বরে স্থানীয় জনগণকে অবহিত করা।
খ) ১ টি সংকেত পতাকা উত্তোলন করা।
গ) ঘূর্ণিঝড় প্রস্ততি কর্মসুচীর বাস্তবায়ন বোর্ডের জরুরী সভা , সিপিপি উপজেলা,ইউনিয়ন এবং ইউনিট কমিটির সভা আহবান করা হয়।
সংকেত নম্বর ৫ থেকে ৭ হলে
ক) মেগাফোন, মাইক, পাবলিক এড্রেস সিষ্টেম দ্বারা স্থানীয় জনগণকে অবহিত করা।
খ) ২ টি সংকেত পতাকা উত্তোলন করা।
গ) ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানতে যাচ্ছে বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। ঘরের বাধন শক্ত করুন, নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা, নিরাপদ পানি ও শুকনা খাবারে ব্যবস্থা করা।
সংকেত নম্বর ৮ থেকে ১০ হলে
ক) মেগাফোন, মাইক, পাবলিক এড্রেস সিষ্টেম দ্বারা স্থানীয় জনগণকে অবহিত করা এবং হ্যান্ড সাইরেন বাজানো।
খ) ৩ টি সংকেত পতাকা উত্তোলন করা।
গ) ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানতে যাচ্ছে মহাবিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয় থাকুন । রেডিও শুনুন এবং টেলিভিশন দেখুন।
Leave a Reply